সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাংবাদিকতার কোন পাঠ আমরা গ্রহণ করেছি?

নির্বাচনে অনিয়মের খবর প্রকাশের জন্য একজন সাংবাদিক যখন জেলে তখন আমাদের সাংবাদিকতার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়তো একটু নিষ্ঠুর হবে। কিন্তু, গণমাধ্যমে দেশী-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বরাতে যেসব খবর ছাপানো হয়েছে তার পটভূমিতে এই আলোচনা জরুরি। 

যে পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য পত্রিকাগুলো বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা কতটুকু নিশ্চিত হয়েছি? সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন যে মোটেও সার্কের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন জোটের ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান কেউ কি তা পাঠক-দর্শক-শ্রোতার কাছে স্পষ্ট করে বলেছেন? এই প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি হলেন সাংসদ ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী। আরেক সাংসদ রুহুল আমীন এবং জাতীয় পার্টি নেতা সোলায়মান শেঠ এর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন সম্পর্কে গুগল করলেই তো এসব তথ্য জানা সম্ভব।

কানাডার পর্যবেক্ষকের বক্তব্য উদ্ধৃত করার সময়ে আমরা কি নিশ্চিত হয়েছি যে দেশটি সরকারীভাবে কাউকে পাঠিয়েছে কিনা? কানাডার মহিলাকে প্রশ্ন করা যেত তার সরকার তাকে একা কেন পাঠিয়েছে? 

ওআইসি আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যবেক্ষক পাঠালেও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? বাংলাদেশে এর আগের কোনো নির্বাচনে ওআইসির পর্যবেক্ষণের কথা তো আমরা শুনিনি। সুতরাং, তাঁকেও জিজ্ঞেস করা যেতো তাঁরা আর কোন কোন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন? মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে সরকারের ঘনিষ্ঠ আরেকটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ঢাকায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যের সফরের কথা এতো দ্রুত সবাই কিভাবে ভূলে যেতে পারেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর বিষয়ে তাঁরা যে ব্যাক্তিগত মতামত দিয়েছিলেন সেগুলোকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত হিসাবে প্রচার করা হয়েছিল। যে কারণে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে ঐ বক্তব্য তাঁদের নয় বলে ব্যাখ্যা প্রকাশ করেছিল। 

সরকারী ভাষ্যকে র্নিদ্বিধায় গ্রহণ করা কি সাংবাদিকতা নাকি জনসংযোগের দায়িত্ব পালন?  

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

একটি জরিপ, নৈরাশ্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন

উন্নত গণতন্ত্রে সরকার , সরকারপ্রধান, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল এবং বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুতে প্রায়ই জনমত জরিপ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কখনো বিশ্ববিদ্যালয়, কখনো সংবাদমাধ্যম, আবার কখনো বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব জরিপ করায়। বেশ কিছু পেশাদার জরিপকারী প্রতিষ্ঠানও আছে, যারা শুধু জরিপের কাজ করে। এসব জরিপ আমাদের গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন ভোটের মতো নয়, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু সেই ওয়েবসাইটের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের মতামত ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রায় দুই দশক বার্ষিক জরিপে রাজনীতির গতিপ্রকৃতির চমৎকার প্রতিফলন দেখা যেত। কিন্তু গণতন্ত্রের ক্ষয়সাধনের সঙ্গে সঙ্গে সেই চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে জরিপ করতে গেলে সরকারের সায় আছে কিনা সেটা দেখা হয়, নইলে পেশাদার বিশেষজ্ঞরা বা তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো ওই দায়িত্ব নিতে চান না। কথা বলার ভয়ের মতো মতামত জানতে চাওয়াতেও এক ধরনের ভয়ের আসর পড়েছে। গণতন্ত্র প্রসারে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, আইআরআই এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারা এখনো মাঝে মধ্যে স্পর্শকাতর রাজন

ভিসা নিষেধাজ্ঞা গুরুতর, সাংবাদিক নির্যাতন কী

একই দিনের দুটি সংবাদ শিরোনাম, ’৯ মাসে ২১৭ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার: আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ এবং ’পিটার হাসের বক্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপ, সমাবেশে সাংবাদিকনেতারা’। দুটো খবরই সাংবাদিকতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে। তবে একটি খবর, যাতে আছে সেই সব সাংবাদিকদের কথা, যাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শারীরিক ক্ষতি অথবা গ্রেপ্তার ও মামলার কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন; আর অন্যটিতে ভবিষ্যতে কোনো গণমাধ্যমকর্মী যুক্তরাষ্ট্র যেতে চাইলে ভিসা না পাওয়ার কারণে তিনি বা তাঁর যে সম্ভাব্য ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে আশঙ্কা। সাংবাদিকদের নিপীড়ন–নির্যাতন ও হয়রানির বিষয়ে গবেষণার কাজ ও তা প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেছে একটি মানবাধিকার সংগঠন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার দুশ্চিন্তায় প্রতিবাদী হয়েছেন সাংবাদিকদের অপেক্ষাকৃত নতুন একটি প্লাটফর্ম জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট।  বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিয়মিত কাজের একটি হচ্ছে বিভিন্ন নিপীড়ন–নির্যাতন ও হয়রানির মত অধিকার লংঘনের তথ্য সংগ্রহ করা এবং তারই অংশ হিসাবে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতার ওপর তাদের আলাদা মনোযোগ। তাদের প্রকাশিত হিসাব

ভারত কেন গণতন্ত্রের বদলে স্থিতিশীলতার কথা বলছে

শুরুতেই চলতি সপ্তাহের দুটো খবরের দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। প্রথমটি  বাংলাদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা, বাসসের  ১৭ ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদন। এতে তারা জানিয়েছে, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর বলেছেন, ’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী। কারণ, তিনি স্বৈরাচার থেকে  দেশকে মুক্ত করেছেন।’ ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘৫২ বছরে বাংলাদেশের অর্জন এবং আগামী দশকগুলোতে এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে দেশটির অবস্থান’ শীর্ষক একটি আলোচনায় তিনি ছিলেন মূল বক্তা। তিনি আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ’বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় তিনি এখানে দারুণ আনন্দ দেখতে পাচ্ছেন।’   দ্বিতীয় খবরটিও ভারতের আরেকজন সাবেক কূটনীতিকের বক্তব্যসম্পর্কিত, যা তিনি ১৮ ডিসেম্বর ঢাকাতেই একটি দৈনিকের আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেছেন। বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কে নির্বাচিত হবেন, সে বিষয়ে দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটা বোঝা যে নির্বাচনে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ভারত গণতন্