সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ব্রেক্সিট চুক্তি নাকচের পর নির্বাচন নাকি গণভোট

ইউরোপের সঙ্গে বিচ্ছেদের চুক্তির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ব্রিটেনের পার্লামেন্টারি ইতিহাসের বৃহত্তম ব্যবধানে পরাজয়ের রেকর্ড করেও পদত্যাগ করেননি। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সেটাই ঘটত। কিন্তু, ব্রিটেন এবং ইউরোপের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত যে সময়টা স্বাভাবিক নয়। বিরোধী দল তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও পাঠকের হাতে এই কাগজ পৌঁছানোর সময়েও প্রধানমন্ত্রী পদে সম্ভবত তিনি বহাল থাকছেন।

সময়টা যে স্বাভাবিক নয় তার প্রধান লক্ষণ, ব্রেক্সিট প্রশ্নে ব্রিটেনের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলে নিজেদের মধ্যেই কোনো মতৈক্য নেই। যাঁরা ইউরোপের সঙ্গে যেকোনো মূল্যে বিচ্ছেদ চান, তাঁদের সঙ্গে যাঁরা বিচ্ছেদ চান না—এই পরস্পরবিরোধী এমপিরা পার্লামেন্টের না ভোটের লবিতে ঢুকেছেন প্রায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। একইভাবে, ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদের বাইরে সারা দিন ধরে দুই পক্ষের যে হাজার হাজার সমর্থক পরস্পরবিরোধী স্লোগানে গলা ফাটিয়েছেন, তাঁরা হঠাৎ করে একসুরে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। তবে, মিস মের চুক্তির বিরুদ্ধে এতটা জোরালো মতৈক্য হলেও তার বিকল্প কী, সে প্রশ্নের উত্তরে বিভাজন কিন্তু একটুও কমেনি।
ক্ষমতাসীন টোরি পার্টির ১১৮ জন এমপি প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিলেও তাঁদের বেশির ভাগই আস্থা ভোটে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিতে অনিচ্ছুক। দুই বছর না পেরোতেই আরেকটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য তাঁরা প্রস্তুত নন। থেরেসা মের সরকার এমনিতেই সংখ্যালঘু সরকার এবং কথিত ‘কনফিডেন্স অ্যান্ড সাপ্লাই’ বা ইস্যুভিত্তিক সমঝোতার ভিত্তিতে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) ১০ জন সদস্যের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। ডিইউপিও চায় না যে থেরেসা মে সরকারের পতন হোক এবং বিরোধী  দলীয় নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রী হন। বিচ্ছেদ প্রশ্নে ইউরোপের সঙ্গে দর-কষাকষিতে ব্যর্থতা এবং দুই বছর সময় নষ্টের জন্য তাঁরা থেরেসা মেকে দায়ী করলেও তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তাঁরা প্রস্তুত নন।
পার্লামেন্টে নাকচ হওয়া ব্রেক্সিট চুক্তিতে যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো হচ্ছে, ব্রিটেনে বসবাসরত ইউরোপীয় এবং ইউরোপে ছড়িয়ে থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা, অবাধ চলাচলের অধিকারের ইতি টানা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিচ্ছেদের আগে বিভিন্ন সময়ে সম্মত হওয়া আর্থিক দায় ৩ হাজার ৯০০ কোটি পাউন্ড পরিশোধ করা এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করা। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের চুক্তি না হলে ‘ব্যাকস্টপ’ নামে অভিহিত ব্যবস্থায় বাণিজ্য অব্যাহত রাখা। আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ব্রিটিশ রাজ্য উত্তর আয়ারল্যান্ডের যে ভূসীমান্ত আছে, সেখানে স্থায়ী সীমানাপ্রাচীর নেই এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তিচুক্তির শর্ত অনুযায়ী ওই সীমান্ত উন্মুক্ত থাকার কথা। কিন্তু, দুই বছরের মধ্যে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হলে পণ্য চলাচল এবং শুল্ক আরোপের বিষয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হবে, তা এড়াতে যে পদ্ধতি চালু হবে, সেটাই ব্যাকস্টপ। ব্যাকস্টপের মানে হবে, চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত উত্তর আয়ারল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন ও শ্রম ও পরিবেশবিষয়ক মানসমূহ মেনে চলতে হবে। এই শর্তটিই হচ্ছে থেরেসা মের চুক্তির সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ।
আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী মেকে পদচ্যুত করার সম্ভাবনা যে ক্ষীণ, বিরোধী দল লেবার পার্টিও সে বিষয়ে সচেতন। যে কারণে গত কয়েক মাসে অন্যান্য বিরোধী দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটস এবং গ্রিন পার্টির একাধিক আহ্বানেও তারা অনাস্থা প্রস্তাব আনেনি। টোরি পার্টির যে ১১৮ জন মঙ্গলবার রাতে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন, এখন যদি তাঁদের কারও সমর্থন মেলে, সেটাই হচ্ছে আশা। তবে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই অনাস্থা ভোটের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারকে বিব্রত করে সাধারণ নির্বাচনকে ত্বরান্বিত করা। তাঁদের আশা, দুর্বল ম্যান্ডেটের কারণে সরকার বারবার বিব্রত হতে থাকলে নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া তাঁর আর গত্যন্তর থাকবে না। মূলত লেবার পার্টির নেতৃত্ব বেশ কিছুদিন ধরে সাধারণ নির্বাচনই দাবি করে আসছে।
ব্রিটিশ রাজনীতির বর্তমান সময়ের অস্থিরতার প্রধান কারণ হচ্ছে, প্রধান দুটি দলের মধ্যে তীব্র মতভেদ এবং উভয় দলেই নেতৃত্ব যেটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, তার এমপিরা বিশেষত ব্যাকবেঞ্চার (যাঁরা কোনো সরকারি দায়িত্বে নেই) হিসেবে পরিচিতরা চান তার উল্টোটা। ক্ষমতাসীন টোরি পার্টির এমপিদের একটি অংশ ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে অত্যন্ত কট্টর অবস্থানে রয়েছে, যে গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে পরিচিত মুখ হলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। এই উপদলটি মাত্র মাস দুয়েক আগেই টোরি পার্টিতে থেরেসা মের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে পার্লামেন্টারি পার্টিতে হেরে যায় এবং দলে মিস মের অবস্থান এক বছরের জন্য নিশ্চিত হয়ে যায়। এই গোষ্ঠী চায় কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই ইউরোপের সঙ্গে বিচ্ছেদ। ইউরোপের দেশগুলো তাদের প্রয়োজনেই ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে বাধ্য হবে বলে তাঁদের বিশ্বাস। সরকার এবং দলটির একটি বড় অংশ মনে করে, কোনো চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ ঘটলে ব্রিটেনের অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়বে—আমদানিনির্ভর দেশটিতে খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধসহ জরুরি সরবরাহ বিঘ্নিত হবে, নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে। আর ব্রিটেন এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেনি। টোরি পার্টির তৃতীয় আরেকটি সংখ্যালঘু অংশ মনে করে, ব্রেক্সিটের ভালো-মন্দ এখন অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে এবং সে কারণে এখন দ্বিতীয় আরেকটি গণভোট হওয়া উচিত।
লেবার পার্টির সাধারণ সদস্য এবং সমর্থকদেরও প্রায় ৭০ শতাংশ চায় দ্বিতীয় আরেকটি গণভোট। দলটির শতাধিক এমপিও গতকাল দলের নেতৃত্বের প্রতি খোলা চিঠি দিয়ে এই গণভোটের দাবির পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, জেরেমি করবিন দ্বিতীয় আরেকটি গণভোটের বিষয়ে অনাগ্রহী। উভয় পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব মনে করে, আরেকটি গণভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দেওয়া ১ কোটি ৭০ লাখ ভোটার ক্ষুব্ধ হবেন এবং তা দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। লেবার পার্টিতেও তৃতীয় একটি ধারা যার সংখ্যা নগণ্য, তাঁরা কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকরের পক্ষে। তবে, আরেকটি গণভোটের পক্ষে জনমত বাড়তে থাকায় এবং প্রত্যাশিত সাধারণ নির্বাচনের দাবি আদায় না হলে লেবার পার্টি যে সেই পথে যেতে পারে, সেই সম্ভাবনার কথা অবশ্য তাঁরা বলে রেখেছেন।
মিস মের চুক্তি নাকচ হওয়ার ফলে এখন যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে? পার্লামেন্ট ইতিমধ্যে এমন একটি প্রস্তাব পাস করেছে, যাতে সরকার কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে না পারে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীকে আগামী সোমবারের মধ্যে বিকল্প প্রস্তাব হাজির করতে হবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় নেতাদের কাছ থেকে কোনো বড় ধরনের ছাড় আদায় করতে পারবেন না এবং ফল হিসেবে তাঁর নতুন বিকল্পও প্রত্যাখ্যাত হবে।
ব্রিটিশ রাজনীতিকদের অনৈক্যের বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য ২৭টি দেশের নেতারা মোটামুটিভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আছেন। তাঁরা যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন, তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তাঁরা চুক্তিহীন বিচ্ছেদের সম্ভাব্য সমস্যাগুলো মোকাবিলার প্রস্তুতি আরও জোরদার করেছেন। তাঁরা আরও বলেছেন ব্রিটেনকেই এখন বলতে হবে তারা কী চায়। তবে, তাঁরা যে বড় ধরনের বাড়তি কোনো ছাড় দেবেন না, তার ইঙ্গিত মোটামুটি পরিষ্কার। সমঝোতার জন্য বিচ্ছেদ কার্যকরের নোটিশের (আর্টিকেল ৫০) সময় বাড়াতে তাঁরা হয়তো সহজেই রাজি হবেন। তবে, ২৯ মার্চের মধ্যে যে সমঝোতা সম্ভব নয়, সে বিষয়ে অধিকাংশ রাজনীতিক একমত হলেও প্রধানমন্ত্রী মে এখনো সেই অনুরোধ জানানোর প্রস্তাবে রাজি হননি। আরেকটি নির্বাচন, গণভোট অথবা নতুন কোনো বিকল্প যেটাই হোক, এই সময় বাড়ানোর বিকল্প নেই বলেই অধিকাংশ বিশ্লেষকের অভিমত।
এ রকম পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টের প্রবীণ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে সংকট সমাধানের দায়িত্ব তাঁদের ওপর দেওয়ার প্রস্তাব আলোচনায় আছে। এ রকমটি হলে নজিরবিহীনভাবে সরকারের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব খর্ব হবে। দ্বিতীয়ত, উভয় দলেই ভাঙনের আশঙ্কা এবং নতুন রাজনৈতিক দল আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে। তৃতীয়ত, গণভোটে ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া স্কটল্যান্ড আবারও বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য নতুন করে গণভোটের চাপ বাড়াবে। ব্রেক্সিট বিরোধিতার প্রশ্নে স্কটিশ জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে কোনো ধরনের মতভেদ নেই।
আশঙ্কা আছে উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও। রাজ্যটিতে গণভোটে ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধেই ভোট ছিল বেশি এবং একটি স্থায়ী সীমান্ত সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই চান না। সেই রাজ্যের দল ডিইউপি ব্রেক্সিট কার্যকরের জন্য টোরি পার্টিকে সমর্থন দিয়ে চললেও সেখানকার অপর প্রধান দল আইরিশ জাতীয়তাবাদী শিন ফেন-এর ৭ জন এমপি বরাবরের মতো পার্লামেন্টে অনুপস্থিত থাকছেন। ১৯৯৮ সালে শান্তিচুক্তির পর থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিয়মিত নির্বাচন করলেও একটি দিনের জন্যও দলটি পার্লামেন্টের অধিবেশনে বা কোনো কমিটি কার্যক্রমে অংশ নেয়নি। ২০১৫-এর পার্লামেন্টে তাদের এমপি ছিল ৪ জন, কিন্তু ২০১৭-তে তাদের আসন বেড়েছে আরও ৩টি। দলটি পার্লামেন্টে অংশ নিলে মিস মের জন্য অনিশ্চয়তার ঝুঁকি সম্ভবত আরও বাড়ত।
১৭ জানুয়ারি, ২০১৯‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত বিশ্লেষণ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...