নির্বাচনের
১৯ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনাকে চিঠি লিখে তাঁর তৃতীয় মেয়াদের সাফল্য কামনা করেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশটির সরকারপ্রধানের চিঠিতে বেশ উৎফুল্ল বোধ করছেন।
ফলে, এক সপ্তাহ পরে হলেও চিঠিটির কপি গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। গণমাধ্যমে এই সংবাদের
শিরোনাম হয়েছে ‘হাসিনাকে
ট্রাম্পের অভিনন্দন‘( বিনিউজ২৪.কম)।
ভবিষ্যতের
সাফল্য কামনাও নি:সন্দেহে গুরুত্বর্পূণ। কিন্তু, চিঠির শেষ অংশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
যেসব কথা লিখেছেন সেগুলো পড়ার পরে একজন বাংলাদেশী হিসাবে আনন্দিত হবো না ব্যাথিত হবো
তা নিয়ে সংশয়ে আছি।
প্রেসিডেন্ট
ট্রাম্প লিখেছেন রাজনৈতিক বিরোধী এবং তাঁদের সমর্থকদের ওপর হামলা এবং সাংবাদিকদের নির্যাতনের
খবরগুলো অব্যাহত থাকায় জাতীয় নির্বাচন এবং বাংলাদেশের আর্ন্তজাতিক ভাবমূর্তি কলংকিত
হচ্ছে। এর আগের বাক্যে তিনি লিখেছেন ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮‘র জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের জন্য আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানের
আলোকে আপনার অঙ্গীকার বিশেষভাবে গুরুত্বর্পূণ।
প্রধানমন্ত্রীর
যে অঙ্গীকারের কথা ট্রাম্প ঐ বাক্যটিতে উল্লেখ করেছেন তা কোন বিষয়ে সেটাও তিনি স্পষ্ট
করেছেন আগের অনুচ্ছেদে। সেখানে তিনি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ উভয়েই গণতান্ত্রিক
নীতিমালার ওপর প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি এবং অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
ও সমৃদ্ধির মধ্যে জোরালো যোগসূত্র রয়েছে। আমি আশা করি আপনি বাংলাদেশের সম্প্রসারণশীল
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নজর দেবেন - যার মধ্যে ন্যায্য এবং পরিপূরক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের
প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপগ্রহণও অর্ন্তভুক্ত – এবং মানবাধিকার, ব্যাক্তির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর
প্রতি আপনার অঙ্গীকার নবায়ন করবেন। শান্তির্পূণ ভাবে ভিন্নমত প্রকাশকে রুদ্ধ করা হলে
কেউ কেউ সহিংসতার পথ বেছে নেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে বলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চিঠিতে মন্তব্য
করেছেন।
চিঠিতে
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে বার্মা থেকে বিতাড়িত
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ বলে তিনি জানিয়েছেন।
চিঠির দ্বিতীয় বাক্যে তিনি বাংলাদেশের কোটি কোটি ভোটার – যাঁরা ভোট দিয়েছেন আমেরিকার জনগণের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রশংসা করেছেন।
যে চিঠিতে
বলা হয়েছে নির্বাচন কলংকিত হচ্ছে এবং নির্বাচনের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের আর্ন্তজাতিক
আহ্বানকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই চিঠিকে কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়? বিরোধীদের ওপর
নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর
প্রতি অঙ্গীকার নবায়নের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার বিষয়টিকেই বা কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে?
আমাদের
গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনের কথা বলা হলেও চিঠিতে কিন্তু Congratulation,
Felicitation, Welcome জাতীয় কোনো শব্দ খুঁজে পেলাম না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন