সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নির্বাচনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা কী হবে?

নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক আসবে কি না কিংবা দেশীয় পর্যবেক্ষকদের মূর্তির ভূমিকা পালনের শর্ত নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে অল্পস্বল্প বিতর্ক শোনা যাচ্ছে। এই বিতর্কের দুটো দিক প্রাধান্য পাচ্ছে। একটি হচ্ছে সাংবাদিকদের প্রতি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা, যা অনেকটাই দেশীয় পর্যবেক্ষকদের অনুরূপ। ফলে ভোটের দিনে বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে সম্প্রচারমাধ্যমসহ সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন দলের প্রতি আনুগত্য ও পক্ষপাতের কারণে খবর এবং টক শোতে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের ঘাটতি।
গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই। মুক্ত সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই দেশের ভেতরে ও বাইরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হচ্ছে এবং এসব দাবিতে সংগ্রাম চলছে। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধী ও নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের অঙ্গীকার করার জন্য সম্পাদক পরিষদও সব দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আপাতত নির্বাচনী হাওয়ায় সংবাদমাধ্যমও কিছুটা স্বাধীনতা ভোগের সুযোগ নিতে পারছে। কিন্তু সেই স্বাধীনতার যথার্থ ব্যবহার হচ্ছে কি? কেননা, নির্বাচনের সময় সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। দলীয় আনুগত্যের কারণে সাধারণ মানুষকে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য থেকে বঞ্চিত করা কিংবা পক্ষপাতমূলক নীতি অনুসরণ করা সংবাদমাধ্যমের সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি বিশ্বাসভঙ্গেরই নামান্তর।
এ প্রসঙ্গে আরও আলোচনার আগে নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের গৌরবময় ভূমিকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথা একটু স্মরণ করতে চাই। বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পরিচালনার নীতির ওপর ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের এই প্রশংসার উল্লেখ রয়েছে (কোডস অব কনডাক্ট ফর ইলেকশনস, এ স্টাডি প্রিপেয়ার্ড ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন, গাই এস গুডউইন গিল)। এতে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের বিষয়ে কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়: বাংলাদেশ টেলিভিশন নির্বাচনী প্রচারের সময়ে প্রধান দলগুলোকে নীতিনিষ্ঠভাবে সমান সময় বরাদ্দ করেছে। অধিকাংশ পত্রিকা প্রকাশ্যে কোনো দলের পক্ষে ছিল না। একজন রাজনৈতিক নেতার খবর প্রকাশে ঠিক যতটা জায়গা তারা খরচ করেছে, ঠিক ততটাই দিয়েছে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষার কাগজগুলোই (দু–একটি ব্যতিক্রম ছাড়া) ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য কোনো কিছুর পক্ষে সম্পাদকীয় অবস্থান নেয়নি।
আইপিইউর প্রকাশনায় ১৯৯১ সালের কথাও এসেছে। কেননা, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের ৬৭টি রাজনৈতিক দল আলোচনায় বসে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি আচরণবিধি তৈরি করেছিল। ওই আচরণবিধিতে মাত্র ১৬টি দফা ছিল, যেগুলো এখনো সমভাবে প্রযোজ্য। তবে ওই আচরণবিধি তৈরির পেছনে ছিল আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ: প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচন সমন্বয় কমিটি গঠন। কোনো ধরনের ভুল–বোঝাবুঝি থেকে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হলে তা নিরসনের জন্য ওই কমিটিতে তা আলোচনার ব্যবস্থা ছিল। এসব ইতিহাস এখন আমাদের কাছে অনেকটাই বিস্মৃত, আর নতুন প্রজন্মের কাছে অজ্ঞাত। কেননা, স্বৈরশাসক এরশাদের প্রায় এক দশকের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণ–অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যতটা নৈকট্য তৈরি হয়েছিল, গত ২৮ বছরে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দূরত্ব, অবিশ্বাস এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদ্বেষের জন্ম হয়েছে। তা ছাড়া গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রথম দেড় দশকে রাজনীতিতে যে ভারসাম্য বজায় ছিল, গত এক দশকে উপরিকাঠামোতে তা অনেকটাই বদলে ফেলা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের চিত্রটাও এখন অনেক আলাদা। ১৯৯৬ সালেও বেসরকারি খাতে সম্প্রচারমাধ্যমের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু এখন বেসরকারি খাতই প্রধান হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক স্বার্থে দলীয় আনুগত্যের নিরিখেই বেসরকারি খাতে টিভি চ্যানেল এবং রেডিওর সম্প্রসারণ ঘটেছে। সংবাদপত্রের সংখ্যা বৃদ্ধিও সংবাদমাধ্যমে বহুত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক আনুগত্য একটা বড় বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমালোচনা তা সে যত বস্তুনিষ্ঠই হোক না কেন, তা দমনে একেবারেই নতুন কৌশলের চর্চা—যেমন বেসরকারি বিজ্ঞাপনদাতাদের বিজ্ঞাপন প্রকাশে অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ—নৈমিত্তিক রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক কারণে বিশেষ সুবিধাভোগীদের অনেকের পক্ষেই তাই দলীয় স্বার্থের বাইরে বেরিয়ে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার নীতি অনুসরণ সম্ভব কি না, তা একটা বড় প্রশ্ন।
নির্বাচনের সময় সততা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বস্তুনিষ্ঠভাবে সংবাদ প্রচার, সম্পাদকীয় ও মন্তব্যকে সুস্পষ্টভাবে আলাদা রাখা গণমাধ্যমের বিশেষ দায়িত্ব। নির্বাচনের সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও দল যাতে সমান সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করা সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন দায়িত্ব, ঠিক তেমনি সাংবাদিকদের দায়িত্ব পেশাদারির পরিচয় দেওয়া। এই নিরপেক্ষতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমসুযোগ দেওয়ার বিষয়টি শুধু রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবে, বিষয়টি এমন নয়। বিশ্বের বহু দেশে ব্যক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এসব নিয়ম মেনে চলতে হয়। সম্প্রচারমাধ্যম, অর্থাৎ টিভি ও রেডিওর ক্ষেত্রে ব্রিটেনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে এই ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে হয়। ফ্রান্সে এই নীতি লঙ্ঘন করলে টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স বাতিলের বিধান আছে। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞাপন গ্রহণের ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। বাংলাদেশে যেহেতু কোনো আইনে এ ধরনের নীতিমালা নেই, সেহেতু ‘যেমন খুশি তেমন নীতি’ অনুসরণের চর্চা প্রকট হয়ে উঠছে। অথচ এই খাতের উদ্যোক্তারা এবং সম্পাদকীয় নেতৃত্ব স্ব-উদ্যোগে পুরো সম্প্রচারশিল্পের জন্য এ ধরনের নীতিমালা তৈরি করে নিতে পারেন।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে নির্বাচন কমিশন সংবাদমাধ্যমের জন্য আলাদা কোনো নীতিমালা না করলেও তাদের সামগ্রিক আচরণবিধিতে তফসিল ঘোষণার পর সরকারি টাকায় কারও স্তুতি, সরকারের কোনো অর্জন কিংবা কার্যক্রম প্রচার করতে পারে না। আমাদের সংবাদমাধ্যমে এগুলো এখন অবাধেই চলছে। অবশ্য বেসরকারি খাতের নানা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ ধরনের প্রচার বেশি হচ্ছে বলেই মনে হয়। তবে তা রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ব্যয়ে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। এতে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে ক্ষমতাসীনেরাই।
নির্বাচনী প্রচারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর নীতিগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ ভোটারদের জন্য খুবই জরুরি। সুতরাং, সম্প্রচারমাধ্যমে এসব বিষয়ে বিতর্কের আয়োজন সব দেশেই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের বিতর্ক আজ অবধি সম্ভব হয়নি। তবে প্রথম দুটি নির্বাচনে আলাদা করে দুই দলের নেতারা বাছাই করা প্যানেলের মুখোমুখি হয়েছিলেন। উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের বিতর্ক আয়োজনের দায়িত্ব পালন করে থাকে নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত নিরপেক্ষ একটি কমিশন। বাংলাদেশে অবশ্য অতীতে নির্বাচন কমিশন নেপথ্যে কিছুটা ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এ রকম কোনো চিন্তা এবার তাদের আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। বরং সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী বাছাই করা শ দেড়েক তরুণের সঙ্গে একটি প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন, যেটি চলতি মাসের কোনো একসময়ে টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে। গণভবনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই। এই অনুষ্ঠানে সরকারের নীতিগুলোর কতটা বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ ও নিবিড় পর্যালোচনা সম্ভব হয়েছে, তা সম্প্রচারের পরই বোঝা যাবে। তবে এটি যদি দলীয় কোনো প্রচারমূলক অনুষ্ঠান হয়, তবে তা নতুন কিছু প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে।
আওয়ামী লীগের প্রচার বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের আঙ্গিক কেন বাছাই করে নিলেন, তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে উন্মুক্ত জনবিতর্কে অন্য অনেক রাজনীতিকের চেয়ে প্রধানমন্ত্রী অনেক ভালো করেন। আজ থেকে ১৭ বছর আগে ২০০১–এর অক্টোবরে নির্বাচনের সময় তিনি বিবিসি রেডিওতে টেলিফোনে সরাসরি শ্রোতাদের অনেক কঠিন কঠিন সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন। সঞ্চালক হিসেবে কয়েকটি প্রশ্নে আমারই অস্বস্তি হচ্ছিল। অথচ তিনি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেগুলোর উত্তর দিয়েছিলেন। সে সময় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে একই ধরনের অনুষ্ঠান করতে চাইলেও আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।
সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার বিষয়ে কমিশনের তরফে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়নি। তবে কমিশনের সচিব ভোটের দিন সাংবাদিকেরা কী করতে পারবেন আর কী পারবেন না, তার কিছু ফিরিস্তি দিয়েছেন। তাঁর ওই সব বক্তব্য থেকে ধারণা হয় যে নির্বাচন বোধ হয় শুধু ভোটের দিনেই সীমাবদ্ধ। কেননা, তাঁর নির্দেশনাগুলো সবই ভোটকেন্দ্রভিত্তিক। পর্যবেক্ষকদের মতোই সাংবাদিকদের জন্যও নির্দেশনা হচ্ছে তাঁরা কোনো ভোটকেন্দ্রে একটানা অবস্থান করতে পারবেন না, ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারবেন না, সেখান থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না ইত্যাদি। ভোটকেন্দ্রে একটানা অবস্থান করতে না দেওয়া এবং সরাসরি সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলো বিশেষভাবে সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, আমরা জানি ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সার্বক্ষণিক ক্যামেরা নিয়ে বসে থাকার কারণে ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে তৎকালীন কমিশনের মিথ্যাচার ধরা পড়ে গিয়েছিল। সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে বাক্স ভর্তি করার ছবি কিংবা ব্যালটে আগে থেকে সিল মারা থাকার ছবিগুলোও সরাসরি সম্প্রচারের কারণেই সবাই জানতে পেরেছেন। সরাসরি সম্প্রচার বা একটানা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকা বন্ধের চেষ্টার উদ্দেশ্য তাই সৎ বলে মনে হয় না।
ভোট গ্রহণের কাজে যাতে বাধা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য একসঙ্গে বহু সাংবাদিকের একই কেন্দ্রে অবস্থান হয়তো যৌক্তিক নয়, কিন্তু ভিড় নিয়ন্ত্রণ আর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা এক নয়। একইভাবে শান্তিপূর্ণ ভোট হলে ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে কেউ সরাসরি সম্প্রচার করবেন সেটা যেমন প্রত্যাশিত নয়, তেমনি গোলযোগ হলে কেন্দ্রের বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকে সেই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারে বাধা দেওয়াও যৌক্তিক নয়। কোনো অনিয়ম, গোলযোগ সরাসরি সম্প্রচার করলে তার হয়তো কিছু প্রভাব জনজীবনে পড়তে পারে, কিন্তু সত্য প্রকাশ এবং প্রচারের ক্ষেত্রে তা কোনো বাধার কারণ হতে পারে না।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কমিশন যে মতবিনিময় সভা করেছিল তার আলোকে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ বা অবাধ তথ্যপ্রবাহে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করি, কমিশন অতীতের ভালো নজিরগুলোর দিকে ফিরে তাকাবে এবং ভোটের আগে যেমন সব পক্ষের জন্য সুষম সুযোগ নিশ্চিতের উদ্যোগ নেবে, তেমনি ভোটের দিনে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে না।
(১ ডিসেম্বর, ২০১৮‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের নিবন্ধ ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...