সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গুম, মানবাধিকার ও নির্বাচন

১৩ অক্টোবর, শনিবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। পত্রিকার অন্তত একটি খবর অনেকের মন ভালো করে দিয়েছিল। খবরটি ছিল, আগের রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্যে তো মন ভালো হওয়ারই কথা।
টিভির ব্রেকিং নিউজ স্ক্রলে এই অংশটুকুর পর আমাদের অধিকাংশেরই আর কিছু জানার প্রয়োজন পড়েনি। সংবাদপত্রের শিরোনামেও মোটামুটি খবরের মূল কথাটা চলে এসেছে। পুরো খবরটা সবার আর পড়ার প্রয়োজন হয়নি। যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জেনেছেন বিভিন্ন অঞ্চলের মোট ১৮টি শূন্য আসনের নির্বাচন হয় একসঙ্গে। এর মধ্যে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আসন ছিল ৫ টি। সর্বোচ্চ ১৮৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে ভারত, আর বাংলাদেশ পেয়েছে ১৭৮। বাকিরা হলো বাহরাইন, ফিজি ও ফিলিপাইন। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে তিন বছর এসব দেশ ৪৭ সদস্যের মানবাধিকার পরিষদের নির্বাহী সদস্য হিসেবে কাজ করবে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর যাঁরা ধারণা করছেন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি হবে, বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠবে, তাঁদের আশা পূরণের উপায় কী? নির্বাচনী ডামাডোলে সে রকম কোনো আলোচনা কেউ কি শুনেছেন? ৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে গুমের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যদের কান্নাভেজা আর্তির খবর ভোটের হাওয়ায় অনেক কাগজেই খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। বিচারবঞ্চিত এসব পরিবারের মর্মব্যথা যে কতটা তীব্র তার অভিব্যক্তি পাওয়া যায় ছোট্ট মেয়ে আফসানা ইসলাম রাইদার কথায়। রাইদা বলেছে, ‘আমাকেও নিয়ে যেতে দিন, গুম করে দিন। তাহলে আমি আমার বাবাকে দেখতে পাব।’
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’–এর যোগাযোগের তালিকায় যে ১৭০টি পরিবারের কথা নিশ্চিতভাবে জানা যায় (ডেইলি স্টার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮), সেসব পরিবারের মানবাধিকারের স্বীকৃতি দিতে না পারলে বৈশ্বিক পরিসরে নৈতিক অবস্থান গ্রহণ আদৌ কি সম্ভব?
অবশ্য বলে রাখা ভালো, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্যপদে নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সদস্যরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতির গুণগত মানের সম্পর্ক সামান্যই। সদস্যদেশগুলোর তালিকা দেখলেই তা স্পষ্ট হবে। বৈশ্বিক পরিসরে কাজ করে যেসব মানবাধিকার সংগঠন, সেগুলোর পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই এই নির্বাচনপদ্ধতির দুর্বলতার বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে। চলতি বছরে এশিয়া থেকে যেসব দেশ সদস্য রয়েছে, তার মধ্যে আছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন। অক্টোবরের এই নির্বাচনের পরও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘবিষয়ক পরিচালক লুইস সারবোনো টুইটারে এই নির্বাচনকে তামাশা বলে অভিহিত করেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অনেক দিন ধরেই ফিলিপাইনের মাদকবিরোধী অভিযানে শত শত মৃত্যুর নিন্দা করে আসছে।
মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনকারী কিছু দেশের জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও অস্বস্তির পটভূমিতে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মানবাধিকার পরিষদ। এই পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্য ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোতে বিশেষ তদন্ত অনুষ্ঠান, জাতিসংঘের সব সদস্যরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে তাদের সুপারিশ ও সহায়তা গ্রহণ করা। কিন্তু এখন এই মানবাধিকার পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন–প্রক্রিয়াও বিতর্কের মুখে পড়ছে।
রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা অথবা অন্য কোনো কারণে সংবাদমাধ্যম এসব ক্ষেত্রে সংবাদের বিস্তারিত পটভূমি ব্যাখ্যা না করায় একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়। যেমনটি এ ক্ষেত্রেও ঘটেছে। সেদিনের খবরে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি বাদ গেছে তা হলো, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পাঁচটি আসনে প্রার্থীই ছিল পাঁচটি দেশ। অঞ্চলভিত্তিক কূটনৈতিক তৎপরতার পরিণতিতে ভারত, বাংলাদেশ, বাহরাইন, ফিলিপাইন এবং ফিজি ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রই এই সদস্যপদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেনি। বলাই বাহুল্য, এই পাঁচটি দেশের মধ্যে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ফিজি বাদে বাকি চারটিই মানবাধিকার বিষয়ে সাম্প্রতিক কালে জোর সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। ভিন্নমত দমন, গুম, বন্দুকযুদ্ধ, নিবর্তনমূলক আটকাদেশ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং নাগরিক সংগঠন বা এনজিও কার্যক্রমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মতো বিষয়গুলোতে এসব দেশের পরিস্থিতিতে অনেক মিল পাওয়া যাবে।
তবে কূটনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এসব সদস্যপদে বিজয়ী হওয়ার বাইরেও গণমাধ্যমের নজরে আসেনি যে বিষয়টি তা হলো, বাংলাদেশ এই পদে নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সুনির্দিষ্ট যেসব অঙ্গীকার করেছে সেগুলোর কথা। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন গত ১৪ জুন সাধারণ পরিষদের সভাপতির কাছে লিখিতভাবে বাংলাদেশের পক্ষে এসব স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি পেশ করেন। জাতীয় ক্ষেত্রে প্রায় দুই ডজন এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ডজনখানেক অঙ্গীকার প্রতিপালনের কথা বলার পরপরই সেসবের অনেকগুলোয় শুরু হয়েছে উল্টোযাত্রা।
মানবাধিকার পরিষদের সদস্যপদে যেদিন বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়, ঠিক সেই সপ্তাহেই সংসদে অনুমোদিত হয় এযাবৎকালের সবচেয়ে নিয়ন্ত্রণমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। অথচ সরকার তার জাতীয় অঙ্গীকারে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুদ্রণ, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক মিডিয়ায় সব পর্যায়ে মানবাধিকারের সর্বোচ্চ প্রসার ঘটানোর কথা বলেছে। একই সঙ্গে নাগরিক সমাজের ভূমিকা, যা এনজিও নামেই অধিক পরিচিত, তার গঠনমূলক ভূমিকা জোরদার করার কথাও বলেছে। অথচ বাস্তবে এনজিওগুলোর প্রতি সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের বৈরিতা বেড়েই চলেছে। সরকারের সমালোচনা ও জবাবদিহির প্রশ্ন তুললেই সেই এনজিওর কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও একাধিক এনজিওকে কাজ করতে দেওয়ার প্রশ্নে আপত্তি জানানো হয়েছে।
সরকারের অঙ্গীকারের মধ্যে আছে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং মানবাধিকারবিষয়ক যেসব সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে, সেগুলো পুরোপুরিভাবে প্রতিপালন করা। এসব সনদের মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত হচ্ছে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারবিষয়ক সনদ, আইসিসিপিআর। কিন্তু বিরোধী দলের বৈধ রাজনৈতিক কার্যক্রম, সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানে বিঘ্ন সৃষ্টি এবং নানা অজুহাতে অনুমতি না দেওয়ার চর্চা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। বন্ধ হয়নি কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর মিছিল কিংবা গুম। জাতিসংঘে দেওয়া অঙ্গীকারে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার গুমবিষয়ক গ্রুপের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে জানালেও দেশের বাস্তবতায় তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর সময়কালে দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ২৬ জন, আর ক্রসফায়ারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ৪৩৭ জন। আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে শুধু অক্টোবর মাসেই গুম হয়েছেন ১৩ জন এবং ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন ১৯ জন। ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়, অতীতের মামলার অজ্ঞাতনামা আসামির তালিকায় নাম যুক্ত করা, গায়েবি মামলার রেকর্ডে যে চিত্র মেলে তাতে ওই সব অঙ্গীকার অর্থহীন হয়ে পড়ে।
সরকারের এই অঙ্গীকারনামার একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক সহায়তার বিষয়টির উল্লেখ। বিবৃতির শুরুতে একটা বড় অংশজুড়ে তুলে ধরা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গার আশ্রয় এবং ভরণপোষণের ভার গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ কীভাবে তার আন্তর্জাতিক মানবিক দায়িত্ব পালন করছে। অঙ্গীকারনামার শুরুতেও এই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের এসব নাগরিক নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজেদের দেশে না ফিরে যাওয়া পর্যন্ত তাদের আশ্রয় দেওয়া হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব কর্মসূচি হাজির করবে, সেসব কথিত ভিশন বা দৃশ্যকল্পে মানবাধিকার প্রসঙ্গ কতটা গুরুত্ব পাবে? এত দিন যেসব অন্যায়-অবিচার ঘটেছে, সেগুলোর বিচার বা প্রতিকার মিলবে কি? মানবাধিকার সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গের যে নজির তৈরি হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি বন্ধ না হলে বিশ্বসভায় মানবাধিকারের পক্ষে লড়াইয়ের অঙ্গীকার হবে প্রহসনেরই নামান্তর।
(৮ ডিসেম্বর, ২০১৮‘র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত লেখকের নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...