গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পর আওয়ামী লীগ
সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই প্রথম একটি মাত্র আসনে প্রার্থী হয়েছেন। ২০১৪‘র ৫ জানুয়ারির বিনা প্রতিদ্বন্দিতার নির্বাচনকে অবশ্য এই হিসাবে ধরা হয়
নি। শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদেক ওবায়দুল
কাদেরের ঘোষণা অনুযায়ী একাদশ সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা শুধুমাত্র গোপালগঞ্জ ১ আসন
থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন। পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার রাতেই রংপুর-৬ আসনে
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি তাঁর হাতে তুলে দেন।
২০০৮
সালে ওই আসনটিতে শেখ হাসিনা লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। আর, ২০১৪তে বিনা
প্রতিদ্বন্দিতায় আসনটিতে জয়ী হওয়ার পর তা শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ছেড়ে দেন এবং তিনিও
কোনো প্রতিদ্বন্দিতা ছাড়াই নির্বাচিত হন। এর আগে অবশ্য জোর জল্পনা ছিল যে সজিব
ওয়াজেদ জয় তাঁর পৈত্রিক জন্মস্থানের আসনটিতে নির্বাচন করবেন। বছর কয়েক আগে আওয়ামী
লীগের রংপুর জেলা কমিটিতে তিনি দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করায় ওই ধারণা জোরালো
হয়েছিল। তবে, এবারও তিনি নির্বাচনে আগ্রহী হন নি।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে এখন ১৪ দল ছাড়াও
এবারই প্রথম যুক্ত হয়েছে মোটামুটি শক্তির অধিকারী জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের
রাজনীতিতে বিশ্বাসী বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা ও তার সহযোগীদের যুক্তফ্রন্ট। কয়েকটি
ইসলামী দলও এই মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী। সুতরাং, আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আওয়ামী লীগ যে
বাড়তি চাপের মুখে আছে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু, সেটিই কি দলীয় প্রধানের একটি আসনে প্রার্থী
হওয়ার একমাত্র কারণ?
জাতীয় রাজনীতিতে প্রধান প্রতিদ্বন্দী হিসাবে যিনি
গত কয়েক দশক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে রেখেছিলেন নির্বাচনে
তাঁর অনুপস্থিতি এর একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। খালেদা জিয়া কারাগারে না থাকলে এবং
নির্বাচন করতে পারণে যে একাধিক আসনে প্রার্থী হতেন তা মোটমুটি নিশ্চিত ছিল। ফেনী এবং
বগুড়ায় তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমাও পড়ে এবং বাছাইয়ে তা বাতিল হয়ে যায়। এরশাদও একাধিক
আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এবং জোটের সিদ্ধান্তের বাইরেও তাঁর একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দিতা
করার সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়া যায় না।
৯১‘র পর থেকে দুই প্রধান দল – আওয়ামী রীগ ও বিএনপির
দলীয় প্রধানরা একাধিক আসনেই প্রতিদ্বন্দিতা করে এসেছেন। জাতীয় পার্টির প্রধান এরশাদও
এক্ষেত্রে পিছেয়ে থাকেন নি। কার্য্যত: শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া এবং জেনারেল এরশাদ তিনটি
করে আসনে নির্বাচন করে এসেছেন। তবে, একাধিক আসনের নির্বাচন শেখ হাসিনা সবসসময়ে শতভাগ
সাফল্য পান নি। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার রেকর্ডটি অবশ্য শতভাগ সাফল্যর্পূণ।
শেখ হাসিনা যে দুটি আসনে সাফল্য পাননি তার একটি হচ্ছে
রংপুর ৬ এবং আরেকটি ঢাকা ৬। ২০০১ সালের নির্বাচনে রংপুর ৬ আসনে তিনি বিএনপি প্রার্থীর
কাছে প্রায় ১৪ হাজার ভোটে হেরে যান। তার আগের দুটি নির্বাচনে আসনটিতে বিজয়ী হয়েছিল
জাতীয় পার্টির প্রার্থী। নির্বাচনী বিশ্লেষকরা যেসব আসনকে কোনো দল বা প্রার্থীর জন্য
নিরাপদ বা নিশ্চিত আসন বলে চিহ্নিত করে থাকেন গোপালগঞ্জ ৩ ঠিক সেরকমই একটি আসন এবং
শেখ হাসিনা একাধিক আসনে জয়ী হলেও সংসদে সব সময়ে এই আসনটিরই প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বস্তুত:
গোপালগঞ্জের সব কটি আসনই আওয়ামী লীগের নিরাপদ আসন হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
বারো বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নির্বাচনে অংশ
নেওয়ায় এবং ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী কিছু দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারায় সাধারণভাবে
একটা জোরালো প্রতিযোগীতার আবহ তৈরি হয়েছে। প্রতিদ্বন্দীদের এই নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের
পরিণতিতেই আওয়ামী লীগ মহাজোট সম্প্রসারণে বাধ্য হয়েছে। দলের নেতারা বারবার বলেছেন একাধিক
জরিপের ওপর ভিত্তি করেই প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। এই পটভূমিতে দল এবং জোটের সবচেয়ে
জনপ্রিয় নেত্রীর নিরাপদ আসন বেছে নেওয়ার মধ্যে যদি কেউ কোনো ইঙ্গিত খোঁজেন তাহলে তার
জবাব কী হবে?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন