সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রহস্যময় প্রশংসা !


পোপের চেয়েও বড় ক্যাথলিক বলে যে বাগধারা চালু আছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অনুসারীদের মধ্যেও সেরকম অনেককেই দেখা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এরকম একজন অনুসারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং একটি টিভি চ্যানেলের প্রধানের একটি নিবন্ধ অনিবার্য শেখ হাসিনার দায়পড়ার পর থেকেই একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে, যার কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসার্পূণ এই লেখার শেষদিকে যেসব কথা বলা হয়েছে তাতেই এই প্রশ্ন।
তাঁর লেখায় যেসব সমস্যার কথা উঠে এসেছে সেগুলোর তালিকা মোটামুটি এরকম:
১. আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক হেফাজতসংস্রবে দলটির অন্তর্গত চেতনাকেই গুলিয়ে ফেলার আশঙ্কা দেখে দিয়েছে।
২. রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনুপস্থিতিতে পুলিশের কিছু কিছু সদস্যও যেন লাগামহীন হয়ে পড়েছেন।
৩. প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও খানিকটা বেপরোয়া ভাব লক্ষণীয়।
৪. মাত্রা ছাড়া ঘটনা ঘটেছে নিম্ন ও উচ্চ আদালতেও।
 ৫. বিশ্বের অপরাপর গণতান্ত্রিক দেশের তুলনায় উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিও যেন একটু বেশি দৃশ্যমান।
৬. ব্যাংকিং সেক্টর এবং শেয়ার মার্কেটই শেখ হাসিনাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দেবে।
এগুলো উল্লেখ করার সময়ে তিনি আরও লিখেছেন এসবই বঙ্গবন্ধুর কন্যার জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত
আওয়ামী লীগের ১০ বছরের শাসন আমলে সুশাসনের প্রশ্নে ব্যত্যয়ের একটি নাতিদীর্ঘ তালিকা প্রস্তুত করা হয়তো কোনো কঠিন কাজ হবে না, বলে মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন এসবের লাগাম টেনে ধরার ক্ষমতা কেবল শেখ হাসিনারই রয়েছে।
১০ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি যখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার সুযোগ চাইছে তখন এসব সমস্যার  স্বীকারোক্তি কি কোনো ইঙ্গিত বহন করে? এই তালিকার কোনোটিই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সৃষ্টি নয়। হেফাজতকে কাছে টেনে নেওয়ার দায় যেমন আওয়ামী লীগের একান্ত নিজস্ব, তেমনি পুলিশ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ বাইরের কেউ করেনি। আদালতে মাত্রা ছাড়া ঘটনা কারা ঘটাচ্ছেন? বিচারবিভাগ - বিশেষ করে নিম্ন আদালত তো এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে? সামরিক বাহিনীকে উন্নয়ন কর্মকান্ডে বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত করার বিষয়টিও সরকারের নীতিরই প্রতিফলন। আর, ব্যাংক এবং শেয়ার বাজারের সংকটের দায় যে ব্যাক্তিবর্গের, তাঁরাও  আবার ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নে নির্বাচন করছেন। ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজার লুটের জন্য দায়ী ব্যাক্তিদের বিচারের বদলে যখন পুরষ্কৃত করা হচ্ছে তখন এসব সমস্যাগুলোর কথা মনে করিয়ে দেওয়া কেন?  


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...