সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আদালতে প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে কিছু প্রশ্ন


রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মনোনয়ন পাননি। তখন কথা উঠলো, ভোটে দাঁড়ালে আদালতে তাঁর প্রয়োজন মেটাবে কে? সেকারণেই আওয়ামী লীগ তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি, তাঁর আর নির্বাচন করা হয় নি। নির্বাচনের সময়ে তাঁর প্রধান কাজ ছিল বিরোধীদলের যত বেশি সংখ্যক প্রার্থীর প্রার্থিতা আটকে দেওয়া যায় তা নিশ্চিত করা।

অতীতে দেখা গেছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রার্থীরা প্রার্থিতা ফিরিয়ে নিতে পেরেছেন। এমনকি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও সরকার কারো প্রার্থিতা বাতিল বা স্থগিত করাতে পেরেছে বলে নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নির্বাচন কমিশনেরও আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার নজির বিরল। সাধারণত: প্রার্থীরাও প্রার্থিতা টিকে গেলে প্রচার-প্রচারণাতেই মনোযোগী হয়েছেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আদালতের শরণাপন্ন হননি।  

আর, এবার দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেলেও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ অথবা আপিল বিভাগ থেকে তা স্থগিত হয়ে গেছে বা প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। যাঁরা অযোগ্য হয়ে গেলেন তাঁদের প্রায় সবাই বিরোধীদলের এবং এঁদের সংখ্যা প্রায় ডজনখানেক। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ভোটের আগেই এসব আসনে ক্ষমতাসীন দলকে এগিয়ে রাখার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হয়ে গেছে। 

পাঁচটি আসনে এখন তাঁদের কোনো প্রার্থীই নেই। যাঁদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে তাঁরা হলেন: আফরোজা খান (মানিকগঞ্জ) , খন্দকার আবু আশফাক (ঢাকা), তমিজ উদ্দিন (ঢাকা), রশিদিজ্জামান 
মিল্লাত (জামালপুর), আলী আজগর (ময়মনসিংহ),  তাহসিনা রুশদী (সিলেট), এম  মুহিত (জামালপুর), মোরশেদ মিল্টন (বগুড়া), রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ( নাটোর) এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ( সিরাজগঞ্জ)। এছাড়া দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার তিনটি আসন ( বগুড়া ও ফেনী)।

ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের আর্শীবাদপুষ্ট কারো ব্যাপারে অবশ্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে সংবিধান রক্ষায় ততোটা সক্রিয় দেখা যায় নি। আবার, ঋণখেলাপের কারণে প্রার্থিতা বাতিলের ঘটনা তেমন একটা নেই। বরং, হাইকোর্ট বিভাগ ক্ষমতাসীন দলের চিফ হুইপকে অযোগ্য ঘোষণা করলেও আপিল বিভাগে তা উল্টে গেছে। ওই মামলায় আপিল বিভাগে অ্যাটর্নি জেনারেলকে কিন্তু দেখা যায় নি। স্পষ্টত:ই, প্রতিটি আসনে একাধিক বিকল্প প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিএনপির কৌশলকে নস্যাৎ করতে আওয়ামী লীগের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বর্পূণ। 

উপজেলা চেয়ারম্যান বা পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করলেও পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ার কারণে এসব প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় অন্তত দুটো প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রথমত: পদত্যাগপত্র গ্রহণের ক্ষমতা যেহেতু সরকারের হাতে সেহেতু ক্ষমতাসীন দলের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সেটি গ্রহণে অযথা কালক্ষেপণ করে কাউকে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কিনা? কোনো জনপ্রতিনিধি পদত্যাগ করতে চাইলে তাকে জোর করে সেই পদে রাখা সম্ভব ? অতএব, যৌক্তিক পদক্ষেপ হিসাবে পদত্যাগ গৃহীত হয়েছে বলেই তো আদালতের বিবেচনা করা উচিত। দ্বিতীয়ত: সংসদ সদস্যরা স্বপদে বহাল থেকে যখন নির্বাচন করছেন তখন একজন উপজেলা চেয়ারম্যান বা পৌর মেয়রকে কেন সংসদ নির্বাচনের জন্য পদত্যাগ করতে হবে?  
( প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে যাঁদের তাঁদের তালিকা পরে সংযোজিত হয়েছে।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...